এখনও খোঁজ নেই বায়ুসেনার বিমানের, মান্ধাতা আমলের যন্ত্রই কাল

421

সোমবার আসামের জোরহাট থেকে অরুণাচল প্রদেশের মেচুকা এয়ার ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের দিকে যেতে গিয়ে যে ভারতীয় বায়ুসেনার ১৩ জন আধিকারিক সমেত ‘নিখোঁজ’ হয়েছিল এএন-৩২, মঙ্গলবারও তার হদিস মিলল না।

এখনও খোঁজ নেই বায়ুসেনার বিমানের, মান্ধাতা আমলের যন্ত্রই কাল

এখনও হদিস মেলেনি।এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: এমনিতে ভারতীয় বায়ুসেনার ভরসার ‘পাত্র’ সে। কিন্তু সোমবার আসামের জোরহাট থেকে অরুণাচল প্রদেশের মেচুকা এয়ার ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের দিকে যেতে গিয়ে যে ভারতীয় বায়ুসেনার ১৩ জন আধিকারিক সমেত ‘নিখোঁজ’ হয়েছিল এএন-৩২, মঙ্গলবারও তার হদিস মিলল না। উল্টে যা নয়া তথ্য মিলছে, তাতে সন্ধান মেলার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ বলেই আশঙ্কা। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ওই বিমানে যে ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বিকন’ ব্যবহার করা হয়েছিল, অর্থাৎ যেখান থেকে বিপদসঙ্কেত পাঠানোর কথা, সেটির উৎপাদন অন্তত ১৪ বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

সহজ ভাষায় বিপদসঙ্কেত পাঠানোর যন্ত্রটি মান্ধাতার আমলের। সেটি থেকে আদৌ কোনও সঙ্কেত আসা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রয়েছে কিছু প্রযুক্তিগত প্রশ্নও। যেমন— এসএআরবিই৮ নামে যে এমার্জেন্সি লোকেটর ট্রান্সমিটার(ইএলটি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি থেকে তখনই বিপদসঙ্কেত বেরোনো সম্ভব, যখন কোনও বিমান মাধ্যাকর্ষণের থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিতে মাটিতে আছড়ে পড়বে। দ্বিতীয়ত, এর থেকে যে বিপদসঙ্কেত বেরোবে সেটি একমাত্র ‘লাইন অফ সাইট’ বরাবর ছড়াবে। এর মাঝে যদি কোনও বাধা আসে, তাহলে সে সঙ্কেত সংশ্লিষ্ট উপগ্রহের ধরা পড়া কঠিন। মান্ধাতার আমলের বিপদসঙ্কেত পাঠানোর যন্ত্রটি তাই ভূপ্রাকৃতিক দুর্গমতা পেরিয়ে কতদূর বিপদসঙ্কেত পাঠিয়ে উঠতে পারবে, তা নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই।

এবং সে আশঙ্কা বাস্তব রূপ নিচ্ছে। কারণ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও বিপদসঙ্কেত পাননি অনুসন্ধানকারীরা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এসএআরবিই৮-এর একাধিক সমস্যা থাকলেও একটি সুবিধা রয়েছে। আর তা হল যে কোনও আন্তর্জাতিক বিপদ তরঙ্গেই বার্তা পাঠাতে পারে সেটি। পাশাপাশি ভারতীয় বায়ুসেনার সু-৩০এমকেআই, সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস তল্লাশি অভিযানে লেগে গিয়েছে। রাশিয়ার এমআই১৭কেও ব্যবহার করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ সন্ধানকারী পি৮আই এয়ারক্র্যাফ্ট আবার মঙ্গলবার অনুসন্ধানে যোগ দেয়। ইসরোর ‘রিস্যাট’-এর মতো উপগ্রহকেও কাজে লাগানো হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশও পুরোদস্তুর সহায়তা করছে। শুধু দিনে নয়, সোমবার রাতভরও উড়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা ও সেনাবাহিনীর চপার ও বিমান। মঙ্গলবার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। পরে বৃষ্টিও নামে। তার উপর ঘন জঙ্গল। সব মিলিয়ে উদ্ধারকাজে বাধা ছিলই।

তবে সোমবারের ঘটনার সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পেয়েছেন বছর দশেক আগের একটি ঘটনার। ২০০৯ সালের জুনে এ ভাবেই মেচুকার দিকে যেতে গিয়ে একটি একটি এএন৩২ এয়ারক্র্যাফ্ট হারিয়ে যায়। সে বারও সেখানে ছিলেন ১৩ জন। পরে অবশ্য জানা যায়, সেটি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রত্যেকেরই। আবার বছর তিনেক আগে আরেকটি এএন-৩২ এয়ারক্র্যাফ্ট চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। এ বারও রহস্য ঘনাল ভরসার পাত্রকে ঘিরেই।

Источник